Discover Natural Beauty Tips
অফিস শেষে ত্বকের যত্ন
সারাদিনের ব্যস্ততা এখন ঘর থেকে ঘরের বাইরেও। বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাত্রা এখন এতটাই ব্যস্ত যে, নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার সময় প্রায় নেই বললেই চলে। অফিসের কাজের চাপ, বাইরের দূষণ, স্ট্রেস, এবং ঘুমের ঘাটতি সব মিলিয়ে ত্বকের ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরে ত্বকের যত্ন নেয়া অনেকের কাছেই কঠিন মনে হয়। তাই দিন না পেরোতেই ত্বকে নানা রকম সমস্যা শুরু হয়ে যায়। তবে আমাদের সবারই প্রয়োজন ত্বকের যত্নে খুব বেশী না হলেও কিছুটা সময় অন্তত প্রতিদিন দেয়া।
চলুন জেনে নেয়া যাক অফিস শেষে কিছু সিম্পল স্কিন কেয়ার স্টেপস
১.ক্লিঞ্জিং: ঘরে ফেরার পর প্রথম কাজই হবে ভালো মতো হাত-মুখ ধুয়ে নেয়া। সারাদিনের জমে থাকা ধুলো ময়লা, তেল কিংবা মেকআপ পোরস ক্লগ করে দেয়। এতে স্কিন ইনফ্ল্যামেশন হয়ে একনি কিংবা পিম্পলের মত সমস্যা তৈরি করে। তাই বাইরে থেকে এসে হাত পরিষ্কার করে নিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। স্কিন সুইটেবল ও পিএইচ ব্যালেন্সড যুক্ত প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে। প্রথমে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ভেজা ত্বকে পরিমাণমতো ফেসওয়াশ আঙ্গুলে নিয়ে মুখ এবং গলায় ২-৩ মিনিট সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করে নিন। এরপর ঠান্ডা বা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন এবং একটি নরম তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে ত্বক মুছে নিন। এটি ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
২.ডাবল ক্লিঞ্জিং:
বেশ কিছুদিন আগেও ডাবল ক্লিঞ্জিং সম্পর্কে কারো তেমন ধারণা ছিল না। কোরিয়ান স্কিন কেয়ার হাইপে থাকার কারণেই এটি এখন জনপ্রিয় স্কিন ক্লিঞ্জিং মেথড। আর তাছাড়াও সারাদিনের ধুলো-ময়লা ,তেল এসব স্কিনে জমা হয়ে ত্বকের ভেতরে প্রবেশ করে। ডাবল ক্লিঞ্জিং মানে শুধু ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া ব্যাপারটা তা নয়। প্রথমে অয়েল বেজড যে কোন ক্লিঞ্জার যেমন ক্লিজিং অয়েল ,বাম বা মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ময়লা বা মেকআপ উঠিয়ে নিয়ে পরে যে কোন ওয়াটার বেজড ক্লিঞ্জার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করার প্রসেসই হল ডাবল ক্লিঞ্জিং। অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করে বাইরে বের হন কিংবা মেকআপ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে স্কিন মাইসেলার ওয়াটার কিংবা ক্লিঞ্জিং বাম দিয়ে ক্লিন করে তারপর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
৩. স্কিন কেয়ারে সিরাম বা এসেন্স এর ব্যবহার
প্রচন্ড ব্যস্ততার কারণে যারা স্কিন এক্সফোলিয়েশন একদমই করতে পারেন না তারা চাইলে স্কিন কন্সার্ন অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রার সিরাম কিংবা এসেন্স ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের সিরাম বা এসেন্স এ AHA(Alpha Hydroxy Acid) বা BHA (Beta Hydroxy Acid) এর মত ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে যা স্কিন এক্সফোলিয়েট করতে সাহায্য করে। তবে স্কিনে যদি কোন সমস্যা না থাকে তারা চাইলে গ্লাইকোলিক ও হায়ালুরনিক অ্যাসিড যুক্ত সিরাম ব্যবহার করলে ভালো। এটি স্কিনের ডেড স্কিন সেল রিমুভ করে স্কিনের ডালনেস দূর করে। সেই সাথে স্কিন পোরস ডিপলি ক্লিন করে । এতে স্কিন হয় সফট । ফেস সিরাম হল একটি লাইট ওয়েট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট যাতে কন্সেন্ট্রেটেড অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস থাকে এবং তা স্কিনের নির্দিষ্ট কন্সার্ন দূর করতে হেল্প করে।
সিরামে অন্যান্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের তুলনায় হাই কন্সেট্রেটেড অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস থাকে যা ত্বকের ডালনেস, হাইপারপিগমেন্টেশন, এনলারজড পোরস, ড্রাইনেস এবং আরও কিছু নির্দিষ্ট কন্সার্ন কে টারগেট করে। সাধারণত, প্রতিদিন ফেস সিরাম ব্যবহার করা যায় কিন্তু এটি সিরামের ধরণের উপর নির্ভর করে। স্কিন ইরিটেশন এড়াতে সপ্তাহে মাত্র কয়েকবার রেটিনল সিরাম ব্যবহার করা গেলেও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরামের মতো কিছু সিরাম প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী।
সিরাম আসলে রাতে ব্যবহার করলে ভালো। কারণ আমরা যখন রাতে ঘুমাই তখন আমাদের স্কিন সেল রিল্যাক্সড থাকে এতে স্কিনে সিরাম এর কার্যকারীতা বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে কোরিয়ান বিউটি ট্রেন্ডের অন্যতম জনপ্রিয় প্রোডাক্ট হচ্ছে এসেন্স। ফেইস এসেন্স হচ্ছে একটি ওয়াটার বেজড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট যাতে অনেক বেশি পরিমাণে অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস থাকায় এটি ত্বকের ওভারঅল হেলথকে বুস্ট করতে অনেক বেশি সাহায্য করে। ক্লেঞ্জার এবং টোনার ব্যবহারের পরে এসেন্সের ব্যবহার স্কিনের হাইড্রেশন রিস্টোর করে। পরবর্তীতে সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ইফেক্টিভ রেজাল্টস এর জন্য অনেক বেশি হেল্প করে। যদি নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন করার সময় না থাকে, তাহলে ত্বকের কন্সার্ন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সিরাম দিয়েও এক্সফোলিয়েশন করতে পারবেন। যাদের ত্বকে বিশেষ কোনো সমস্যা নেই, তারা গ্লাইকোলিক বা হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। এই ধরনের সিরাম ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং পোরস ডিপলি ক্লিন করে ত্বককে হেলদি রাখে।
৪. ময়েশ্চারাইজিং
একটা লম্বা সময়ের পর স্কিন হাইড্রেট করা টা বেশ জরুরী। স্কিন হাইড্রেট থাকলে স্কিনের কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে ও স্কিন ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে রিঙ্কলেস ও ফাইন লাইন্স কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। স্কিন গ্লোয়িং রাখতে সাহায্য করে। তাই স্কিন টাইপ বিবেচনা করে অবশ্যই ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
- শুষ্ক ত্বক: হাইয়ালুরোনিক অ্যাসিড, গ্লিসারিন এবং সিরামাইডের মতো হাইড্রেটিং উপাদান সমৃদ্ধ ঘন, ক্রিমি ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- তৈলাক্ত ত্বক: লাইট ওয়েট ও অয়েল ফ্রি ময়শ্চারাইজার বেছে নিন যা আপনার স্কিন পোরস ক্লগ করবে না। অ্যালোভেরা এবং নিয়াসিনামাইডের মতো উপাদান আছে এমন পণ্য ব্যবহার করুন।
- মিশ্র ত্বক: এমন একটি ময়শ্চারাইজার বেছে নিন যা আপনার অয়েলি টি-জোনের জন্য লাইট ওয়েট এবং আপনার ড্রাই প্যাচগুলির জন্য পর্যাপ্ত হাইড্রেশন সরবরাহ করে।
- সংবেদনশীল ত্বক: সুগন্ধি-মুক্ত, হাইপোঅ্যালার্জেনিক ময়শ্চারাইজার বেছে নিন যা আপনার ত্বকের জন্য কোমল।
৫.সপ্তাহে অন্তত ১-২ বার ফেস মাস্ক এর ব্যবহার
কাজের সময় একটা বড় ধরনের চাপ আমাদের ত্বকের ওপর দিয়েও যায়। এসময় স্কিনে একনি, ডার্ক সার্কেলস, রিঙ্কেলস, ফাইন লাইন্স ও ড্রাইনেস এর মত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই বাজার থেকে জিনিস কিনে এনে অনেকেই স্কিন কেয়ার করতে চান না কারণ সেই সময়ই তাদের হয়ে ওঠে না। বাজারে এখন অনেক রেডি ফেস মাস্ক পাওয়া যায় যেগুলো হয়ত সরাসরি স্কিনে ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও শীট মাস্ক ও এখন বেশ পপুলার। খুব ইজিলি এগুলো অ্যাপ্লাই করা যায়। সময় ও খুব কম লাগে। চাইলে ঘরে বসেও খুব সহজ উপায়ে মাস্ক তৈরি করা যায়।
শশা ও অ্যালোভেরা ফেস মাস্ক
১/২টি শশার খোসা ছাড়িয়ে এটিকে ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করুন। যদি আপনার কাছে ব্লেন্ডার না থাকে, তবে শশাটি তাহলে গ্রেট করে রস বের করে নিন। শশার পেস্ট/রসের সাথে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। এক্সট্রা হাইড্রেশনের জন্য জন্য প্রয়োজন হলে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
এরপর পরিষ্কার আঙুল বা একটি ব্রাশ ব্যবহার করে চোখের চারপাশ বাদে মাস্কটি মুখে ও গলায় ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিটের জন্য মাস্কটি রেখে দিন। শশার কুলিং ইফেক্ট পাফিনেস কমাতে সাহায্য করে। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে হালকাভাবে মুছে নিন। এরপর একটি লাইট ওয়েট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
হাজার ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য একটু সময় বের করে ত্বকের যত্ন শুধু নিজের ভালো লাগা কেই নয় কোন কাজে নিজের আত্নবিশ্বাস কেও আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই আমাদের সকলের উচিৎ কিছু সময় হলেও ত্বকের যত্নে কিছুটা সময় দেয়া।