Discover Natural Beauty Tips
চুল পড়া কমাবো কিভাবে?
প্রসঙ্গ যখন নিজের যত্ন, তখন সৌন্দর্য বর্ধনে নারী পুরুষ সবাই হয় চুলের প্রতি যত্নশীল । নিজের যত্নে অনেক বড় একটি ইনভেস্টমেন্ট আমরা আমাদের চুলের জন্য করি। কিন্তু সবারই চিন্তা থাকে চুলে এত কিছু ব্যবহার করার পরও কেন বার বার চুল পড়ে যাচ্ছে?
চিন্তার কোন কারণ নেই। দিনে ৫০ থেকে ১০০ চুল পড়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। চুল পড়লে আবার নতুন চুল গজাবে। তবে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন চুল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী ঝড়ে পড়ে। এটি আসলে অনেক কারণে হতে পারে। কখনো বংশগত,কখনো হরমোনাল কোন সমস্যা কিংবা সারাদিনের কাজের অনেক স্ট্রেস। তারপরও আমাদের সবারই চেষ্টা থাকে ঠিক কি উপায়ে এই অতিরিক্ত চুল পড়া কমানো যায় । চলুন দেখে নেয়া যাক কিছু টিপস।
- চুল ময়েশ্চারাইজ করা
চুল পরিষ্কার রাখতে আমরা মুলত নিয়ম করেই শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি। এই শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হলে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। শ্যাম্পু করার পর অনেকেই আছেন যে কন্ডিশনার স্কিপ করে ফেলেন। এটা করা যাবেনা। কারণ শ্যাম্পু হল এক
ধরনের সারফেক্ট্যান্ট যা চুলে জমে থাকা ময়লা ও তেল দূর করতে সাহায্য করে। আবার কিছু মেডিকেটেড শ্যাম্পু আছে যেমন কিটোকোনাজল যা চুলে খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এই ধরনের সারফেক্ট্যান্ট চুলের ময়লা ধুয়ে ফেলার পাশাপাশি চুলের ময়েশ্চার ও ন্যাচারালও ধুয়ে ফেলে। চুল রাফ হয়ে আসে।
তাই শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তবে যাদের চুল অনেক বেশী ড্রাই ও রাফ তারা চাইলে ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার মাস্ক চুলে হেয়ার স্পা এর মতো সপ্তাহে এক থেকে দু বার কিংবা রেগুলার কন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবে। হেয়ার মাস্ক বা কন্ডিশনার ব্যবহারের সাথে সাথে ধুয়ে ফেলা যাবে না। ৫-১০ মিনিট পর ধুয়ে নিন। এতে চুল হয় সফট ও শাইনি। চুলে কন্ডিশনার দেয়ার সময় চুলে আগা থেকে দিয়ে আসতে হবে। চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
আবার অনেক সময় দেখা যায় শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার করার কিছু সময়ের পর চুল ফ্রিজি হয়ে যায়। চুল ধোয়ার পর চুল হালকা ভেজা থাকা অবস্থায় সামান্য পরিমাণে সিরাম বা লিভ-ইন-কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল সফট থাকে আবার চুলের জট ছাড়াতেও সাহায্য করে। এতে চুল পড়া অনেকটা কমে আসে।
- চুলে ঘন ঘন হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহার না করা
চুলে বার বার বিভিন্ন ধরনের হিট স্টাইলিং টুল যেমন- হেয়ার ড্রায়ার বা স্ট্রেইটনার প্রতিদিন ব্যবহার করলে হেয়ার ফলিকল ড্যামেজ হয়ে যায়। এতে চুল রাফ হয়ে যায় এমনকি মাঝখান থেকেও ভেঙ্গে পড়ে যায়। তাই এই ধরনের টুলস ব্যবহার করা আগে হিট প্রোটেক্টিং স্প্রে, সিরাম কিংবা জেল ব্যবহার করে নিতে হবে।
- ঠিক মত চুল আঁচড়ানো
আমরা অনেক সময় চুল আঁচড়াতে গিয়ে অনেক জোড়ে জোড়ে চুল টান দেই এটা করা যাবে না। জোড়ে চুল আঁচড়ালে চুল অনেক সময় ভেঙ্গে পড়ে যায়। চুলের জট সব সময় আগা থেকে ছাড়িয়ে নেয়া উচিৎ। জট ছাড়ানোর জন্য গোড়া থেকে চুল আঁচড়ালে চুল ছিড়ে চলে আসে। এতেও কিন্তু চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা বেড়ে যায়। এই জন্য মাথার তালুতে হালকা চাপ দিয়ে চুল আস্তে আস্তে আঁচড়ে নিতে হবে।
- গোসলের সময় মাথায় অতিরিক্ত গরম পানি না দেয়া
গোসলের সময় অনেকেই গরম পানি সরাসরি মাথায় চুল ধোয়ার জন্য ব্যবহার করেন। এটা কখনোই করা উচিৎ না। বার বার গরম পানি দিয়ে চুল ধুতে থাকলে চুল রাফ হয়ে ভেঙ্গে পড়তে থাকে। তাই সব সময় স্বাভাবিক রুম টেম্পারেচার এর মাত্রায় পানি ব্যবহার করা উচিৎ।
- অয়েল ম্যাসাজ
চুলে তেল দেয়া কখনোই বাদ দেয়া যাবে না। হেয়ার অয়েল স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। এতে চুল পড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- চুলে অতিরিক্ত হেয়ার কালার না করা
অনেকেই আছেন চুলে কালার বা ডাই ব্যবহার করতে পচ্ছন্দ করেন। চুলে যে কোন হেয়ার কালার ব্যবহার আগে তা চুলের জন্য ঠিক কিনা তা অবশ্যই যাচাই করে দেখে নিতে হবে। ডাই বা হেয়ার কালারে থাকা ক্যামিকেল চুল ড্রাই করে নষ্ট করে ফেলে । এতে চুল পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়। তাই চুলে হেয়ার কালার দিতে চাইলে ন্যচারাল বা অর্গানিক হেয়ার কালার যেমন – হেনা ,বিট রুট দিয়ে কালার করলে ভালো।
- চুলের আগা ছেঁটে ফেলা
চুলের আগা ফেটে যাওয়া এই সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়। এভাবে চুল রেখে দিলে চুল নিষ্প্রাণ দেখায় এবং অতিরিক্ত হেয়ার ফল শুরু হয়। তাই নিয়মিত ৬-৮ সপ্তাহ পর হেয়ার ট্রিম করুন। এতে হেয়ার ফল কমে আসবে এবং চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি পাবে।
- ঘরোয়া হেয়ার মাস্কের ব্যবহার
বিভিন্ন হেয়ার ট্রিটমেন্ট যারা সময় এবং বাজেটের কারণে নিতে পারছেন না তারা চাইলে ঘরে বসেই হেয়ার মাস্ক বা প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
- হাইড্রেটিং দই এবং মধুর হেয়ার মাস্ক:
১/২ কাপ সাধারণ দই এবং ২ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। ভেজা চুলে এই মিশ্রণটি লাগান, বিশেষ করে চুলের ডগায়। চুল শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
দইতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড চুল এবং মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে।
- পেঁয়াজের হেয়ার মাস্ক:
১টি পেঁয়াজ ছিলে গ্রেটার দিয়ে গ্রেট করুন। একটি কাপড়ের সাহায্যে রস বের করুন। একটি বাটিতে পেঁয়াজের রস, ২ টেবিল চামচ মধু এবং ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি স্ক্যাল্প এবং চুলে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রেখে দিন, তারপর একটি মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস সালফারে সমৃদ্ধ, যা চুলের ফলিকল নারিশড করে হেয়ার গ্রোথ করে। এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোপার্টিজ রয়েছে, যা স্ক্যাল্পকে সুস্থ ও সংক্রমণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
- ডিমের সাদা অংশের হেয়ার মাস্ক:
একটি বাটিতে ২টি ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে ফেনার মতো তৈরি করুন। এর মধ্যে ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন, এরপর ঠান্ডা পানি এবং মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ডিমের সাদা অংশ প্রোটিনে ভরপুর, যা চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। এটি চুল মজবুত করতে, চুল এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আজকাল বাজারে এই চুল পড়া রোধে বিভিন্ন ধরনের হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট দেখা যায়। কিন্তু সব সময় এইসব প্রোডাক্টই যে কাজে আসবে ব্যপারটি কিন্তু এমন নয়। শরীরের অন্যান্য অংশের মতই পরিবর্তনশীল আবহাওয়া কিংবা পরিবেশ এর সাথে খাপ খাওানোর ব্যাপারে চুলের বিষয়টিও ব্যাপকভাবে জড়িত। তাই শুধু প্রোডাক্ট এর ওপর নির্ভর করে নয়, উপরোক্ত কিছু বিষয় মেনে চললেই চুল পড়ার এই সমস্যা অনেকটা কমে আসে। তারপরেও যদি সমস্যা খুব বেশী হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যত্নে থাকুক আপনার সুন্দর চুল।