BANGLA

ত্বকের যত্ন প্রতিদিন

ত্বক মানব শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ, যার অবদান বলে শেষ করা যাবেনা। এটি আমাদের শরীরকে পরিবেশগত সমস্যা থেকে বিভিন্নভাবে সুরক্ষিত রাখে। তাই তার প্রতি আমাদের একটু বেশী যত্নশীল হতে হয়। ত্বকের নিজেস্ব উজ্জ্বলতা আছে সঠিক যত্নের অভাবে সেই উজ্জ্বলতাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। বড় কোন সমস্যা না থাকলে ত্বকের ধরন বুঝে সহজ কিছু উপায়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখা যায়।

চলুন জেনে নেয়া যাক ত্বকের যত্নে কিছু বেসিক স্কিন কেয়ার স্টেপস।

বেসিক স্কিন কেয়ার

  • অবশ্যই ভালো মতো মুখ ধুয়ে নিতে হবে:

আপনি যত দামেরই স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন না কেন, মুখ যদি পরিষ্কার না থাকে তাহলে আসলে কোন ধরনের স্কিন কেয়ারই কাজে আসবে না। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে স্কিন সুইটেবল এবং পিএইচ ব্যালেন্স যুক্ত ভালো ফেসওয়াশ বা মাইল্ড সোপ দিয়ে মুখ ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। কেন? কারণ আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন ঠিক তখনো আমাদের স্কিন ঘাম, অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন ও ব্যাক্টেরিয়া তৈরি করতে পারে। ঠিক মত ফেস ক্লিন না করে পোরস ক্লগড হয়ে একনি সহ স্কিনে নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই দিনের প্রথমেই কাজ হবে সুন্দর করে মুখ ধুয়ে নেয়া।

  • টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা

স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখতে পানি ও স্কিনের স্বাভাবিক সিবাম প্রোডাকশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা যখন মুখ পরিষ্কার করি তখন অনেক সময় ময়লা ,ঘাম ও অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব ধুয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ত্বকের ন্যাচারাল অয়েল ও বের হয়ে যায়। যার কারণে ত্বকের ‘পোটেনশিয়াল অফ হাইড্রোজেন’ সংক্ষেপে পিএইচ (pH) লেভেল এর ভারসাম্যে তারতম্য ঘটে। এতে স্কিন ড্রাই হয়ে টান টান ভাব দেখা দেয়। টোনার স্কিনের ন্যাচারাল পিএইচ লেভেল কে ব্যালেন্স করতে এবং ময়েশ্চারাইজার স্কিনে হাইড্রেশন ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। অনেক ক্লিঞ্জিং টোনার ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও মেকআপ তুলতে সাহায্য করে। তাহলে কি  ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজেশন সিস্টেমই কি ত্বকের জন্য যথেষ্ট না? আবহাওয়া, লাইফস্টাইল এবং বয়সের সাথে সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ডের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে. এতে স্কিনে ট্র্যান্স এপিডারমাল ওয়াটার লস হয়। ফলে স্কিন ড্রাই হয়ে অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন করে এবং একনি সহ নানা সমস্যা দেখা যায়। তাই মুখ ধোয়ার পর ভালো টোনার এরপরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। চাইলে নাইট ক্রিম ও ব্যবহার করা যায়।

 

  • সানস্ক্রিনের ব্যবহার

স্কিন কেয়ারে মানুষ সচরাচর যে ভুলটি করে থাকেন তা হল বাহিরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিনের ব্যবহার না করা। আমরা প্রতিদিনই ঘরে কিংবা বাইরে কোন না কোন ভাবে সূর্যের সংস্পর্শে আসি। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্নি শুধুমাত্র ত্বকের ওপরের স্তরকেই নয়, ত্বকের গভীরতম স্তরকে পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ করে। স্কিন ট্যান হয়ে যাওয়া , বার্ন হওয়া এবং রিংকেলস ও ফাইন লাইন্স এমনকি স্কিন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই দিনের বেলা বাহিরে বের হওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে অন্তত এসপিএফ ৩০ বা তার বেশী ব্রড স্পেকট্রাম যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।  প্রতি ২ ঘন্টা পর পর অ্যাপ্লাই করতে হবে। সারাদিন পর ক্লিঞ্জিং বাম বা বাজেট ফ্রেন্ডলি মাইসেলার ওয়াটার তারপর ফেসওয়াশ দিয়ে ডাবল ক্লিঞ্জিং করে নিতে হবে। তবে অবশ্যই সানস্ক্রিন স্কিন টাইপ বুঝে ব্যবহার করা উচিৎ হোক সেটা ড্রাই ,অয়েলি কিংবা সেনসিটিভ। সানস্ক্রিন ত্বক কে সান ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দেয় এবং ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ও লাবণ্য ধরে রাখে।

 

  • বয়সের সাথে ত্বকের যত্ন:

সব সময় যেমন বলা হয়, যে ত্বকের ধরন অনুযায়ী স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিৎ, তেমনি বয়সের সাথে সাথে ত্বকের প্রয়োজন এর বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বয়সের এর সাথে সাথে ত্বকের ও পরিবর্তন হতে থাকে। আবহাওয়া, হরমোনাল বা বংশগত কিংবা আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে কোলাজেন প্রোডাকশন কমে গিয়ে কখনো স্কিন অনেক বেশী ড্রাই হয়ে যায়, আবার কখনো স্কিন অনেক বেশী সেনসিটিভ হয়ে যায়। তাই ত্বকের সমস্যা কিংবা প্রয়োজনীয়তা বা সমস্যা বুঝে সিরাম ক্রিম কিংবা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

  • হেলদি লাইফস্টাইল মেইন্টেইন করা:

আমাদের জীবনে ব্যস্ততার শেষ নেই। নানা রকম কাজের স্ট্রেস কিংবা চারপাশের ময়লা-ধুলোবালি সব কিছুই আমাদের ত্বকে প্রভাব ফেলে। তাই শুধু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর ওপর নির্ভর করে থাকলে লাভ হবে না। সময় মত ঘুম-খাওয়া এসব ঠিক রেখে চলতে হবে। খাবারে ফলমূল ও শাকসবজি যোগ করুন। অতিরিক্ত তেল কিংবা চিনি যুক্ত খাবারের পরিবর্তে টাটকা ফল-শাক সবজি খেলে স্কিন ভালো থাকে। প্রতিদিন অন্তত ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয় যেমন: চোখের নিচে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেলস পড়ে যাওয়া। সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। হেলদি ও হাইড্রেটেড স্কিনের জন্য দিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি খাওয়া উচিৎ।

 

  • এক্সফোলিয়েশন ও ফেস প্যাক ব্যবহার করা:

একটা লম্বা সময়ের পর স্কিন পোরসে তেল, ময়লা ও মৃত কোষ বা ডেড স্কিন সেল জমে যায়। এতে স্কিনে একনি, ব্ল্যাকহেডস এর মতো সমস্যা দেখা যায়। তাই স্কিনের ডালনেস দূর করার জন্য সপ্তাহে অন্তত ১-২ বার স্ক্রাবিং এবং ফেস প্যাক ব্যবহার করলে ভালো। এক্সফোলিয়েশন ডেড স্কিন সেল রিমুভ করে পোরস আনক্লগ করে এবং স্কিন টেক্সচার ইম্প্রুভ করে। চাইলে মাইল্ড ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন যেমনঃ স্ক্রাব উইথ বিডস অথবা ক্যামিকেল এক্সফোলিয়েন্ট যেমনঃ আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড- (AHAs) বা বিটা হাইড্রক্সিকার্বক্সিলিক অ্যাসিড (BHA) আছে এমন প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন। যাদের হাতে সময় খুব কম তারা চাইলে বাজারে রেডি মেড ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে ব্যবহারের আগে ভালো মানের ফেস প্যাক দেখে কেনা ভালো।

অনেক সময় ত্বকের জন্য খুব বেশী কিছু ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। বেসিক কিছু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট যা সহজেই বাজেটের মধ্যে পাওয়া যায় এমন কিছু নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের এই সাধারণ সমস্যা গুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই ত্বকের যত্ন নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *