Discover Natural Beauty Tips
ত্বক ও চুলের সুস্থতায় আদর্শ খাবার
নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে সুস্থতার কোন বিকল্প নেই। সেই ধারাবাহিকতায় সুন্দর চুল ও ত্বক আমাদের সবার কাম্য। আর তাই চুল ও ত্বকের যত্নে আমরা কোন কমতি রাখতে চাইনা। তবে চুল ও ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার এক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট এর মতো।
কিন্তু শুধু প্রসাধনী ব্যবহার করলেই কি ত্বক ও চুল ভালো থাকবে?
না, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, দূষণ এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার অভ্যাস চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই শুধুমাত্র প্রসাধনীর ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। ত্বক ও চুলের যত্ন শুরু করতে হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর মাধ্যমে। নিয়ম করে খাবার গ্রহণ শুধুমাত্র আমাদের দেহে শক্তি সঞ্চার করে না, আমাদের ত্বক ও চুলকে করে ভেতর থেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ।
আজকে কথা বলবো এমনি কিছু খাবার রুটিন নিয়ে যা আপনার ত্বক ও চুল সব সময় ভালো রাখবে।
আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার
প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার আমাদের ত্বক, চুল ও নখের মজবুত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের নিজেস্ব উজ্জ্বলতা আছে। একে বলা হয় কোলাজেন। বয়স ও পরিবেশগত কারণে আমাদের কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যেতে থাকে। অন্যদিকে আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত নতুন কোষ গঠন প্রক্রিয়া বা সেল রিজেনারেশন প্রসেস চলতে থাকে। প্রোটিন নিউ সেল ও কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে স্কিনের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমে আসে এবং ত্বক হয় কোমল ও উজ্জ্বল।
আমাদের চুল ও নখের গঠনে রয়েছে কেরাটিন। আমাদের চুলের ৯৫% শতাংশই কেরাটিন দিয়ে তৈরি। কেরাটিন চুলকে করে মজবুত ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। আমিষ বা প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন- ডিম,দই, দুধ, বাদাম, ডাল,গাজর ইত্যাদি প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখার চেষ্টা করুন।
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার
অনেকে ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়ে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার একদমই এড়িয়ে যান। কিন্তু এভাবে একদমই ছেড়ে দেয়া উচিৎ না। কারণ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা দেহে শক্তি সঞ্চার করে নতুন কোষ গঠন এবং শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক মতো কাজ করতে সাহায্য করে।
গমের আটা, ওটস, ঢেঁকি ছাটা চাল বা ব্রাউন রাইস, আলু, ভুট্টা, ফলের মধ্যে কমলা লেবু, আপেল, কলা এই জাতীয় খাবার খাওয়ার রুটিন করুন। অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। তাই দিনে পরিমাণমতো শর্করা জাতীয় খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
ভিটামিন জাতীয় ফলমূল ও সবুজ শাক-সবজি
উজ্জ্বল ত্বক ও সুন্দর চুলের জন্য আমরা কত রকমের প্রসাধনী ব্যবহার করি। তবে এই উপকারিতা শুধু কী স্কিন কেয়ার ব্যবহারে সীমাবদ্ধ? ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি আইডিয়াল ফুড হ্যাবিট সুনিশ্চিত করতে হবে । তাজা ফল যেমন- কমলা লেবু, পেঁপে, লেবু, তরমুজ, কলা, আম, আনারস ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ভিটামিন-সি ও আয়রন থাকে যা ত্বকের গভীরে কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে স্কিনের ইলাস্টিসিটি বৃদ্ধি করে। ডার্ক স্পটস , রিংকেলস ও ফাইন লাইনস এর মতো সমস্যা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। স্কিন হয় ভেতর থেকে গ্লোয়িং। অন্যদিকে কোলাজেন শুধু মাদের স্কিনেই না আমাদের স্ক্যাল্পেও এটি চুলের ফলিকল ইম্প্রুভ করে চুল পড়া কমায় চুলকে রাখে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ।
সুস্থ থাকতে বিশেষজ্ঞ –এর মতে তাজা ও সবুজ শাক-সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ধরনের শাক-সবজি পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ও আয়রন সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন এ,বি এবং সি এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ সমৃদ্ধ । এটি স্কিনে সিবাম প্রোডাকশন কন্ট্রোল, কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট এবং ফ্রী রেডিক্যাল ড্যামেজ কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ, সি ও আয়রন চুলে হাইড্রেশন প্রোভাইড করে, চুল রাখে ময়েশ্চারাইজড ও সফট।
এছাড়াই ভিটামিন বি আছে এমন পাতা যুক্ত শাক-সবজি যেমন- পালং শাক, ব্রকলি, বীটরুট, গাজর চেষ্টা করবেন প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখতে।
সামুদ্রিক খাবার
বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ যেমন- টুনা, সার্ডিন্স, স্যালমন, রুপচাদা, কড ফিশ হলো ওমেগা -৩ এবং ওমেগা -৬ এর মতো ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস। এই ধরনের হেলদি ফ্যাটি অ্যাসিড স্কিনে ময়েশ্চার ধরে রেখে স্কিন হেলদি রাখতে সাহায্য করে সেই সাথে এটি চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। চুল হয় শাইনি অ্যান্ড সফট।
শুধুমাত্র প্রসাধনী নির্ভর নয়, সুন্দর ত্বক ও চুলের যত্নে আমাদের জীবনযাত্রায় খাবারের তালিকা হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। নিজের খেয়াল রাখুন সব সময়।