BANGLA

দূষণ থেকে ত্বকের সুরক্ষা

বছর ঘুরলেই পরিবেশের পরিবর্তন দেখা যায় । সেই সাথে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করলে আমাদের চুল ও ত্বকে এর ক্ষতিকর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দূষণের কারণে স্কিন ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে প্রিম্যাচিউর এজিং, একনি ও হাইপারপিগমেন্টেশন এর মত সমস্যার সৃষ্টি হয়। আমাদের চুলের ক্ষেত্রে বাতাসে ধুলো বালির সাথে সাথে বিভিন্ন ক্যামিকাল রিঅ্যাকশানের কারণে চুল ড্রাই হয়ে যায়,গোড়া থেকে ভেঙ্গে পড়ে এবং ‘সেনসিটিভ স্ক্যাল্প সিন্ড্রোম’ শুরু হয়।

 

তাই ব্যস্ততার এই জীবনে হাতে সময় কম থাকলেও ত্বক ও চুলের যত্নে কিছুটা সময় বের করা উচিৎ।

ত্বকের যত্নে

  • বাইরে থেকে এসে মুখ ধোয়া:

কাজের সুবাদেই বেশীর ভাগ সময় আমাদেরকে বাইরে থাকতে হয়। এই সময় বাইরের পরিবেশের দুষণ বা ফ্রি র‍্যাডিকাল ত্বকের ন্যাচারাল প্রোটেক্টিভ লেয়ারকে নষ্ট করে দেয়। এতে স্কিন অনেক সময় অতিরিক্ত অয়েলি কিংবা অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে যায়। তাই বাইরে থেকে আসার পর অ্যালোভেরা ও চারকোল যুক্ত স্কিন সুইটেবল ভালো ফেসওয়াশ বা ক্লিঞ্জার দিয়ে ভালো মতো মুখ ধুয়ে নিতে হবে। আমরা অনেক সময় ফেসওয়াশ বা ক্লিঞ্জার হাতে নিয়েই ডিরেক্ট অ্যাপ্লাই করে ফেলি । সবচেয়ে ভালো হয় ভেজা পরিস্কার হাতে ফেসওয়াশ নিয়ে কিছুক্ষণ হাতে মিশিয়ে নিয়ে এরপর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেয়া। এতে ফেসওয়াশ কিংবা ক্লিঞ্জার এ থাকা ইনগ্রেডিয়েন্ট অ্যাক্টিভ হয় এবং স্কিনে ইফেক্টিভলি কাজ করে।

  • ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিনের ব্যবহার:

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর অবশ্যই ভালো এসপিএফ যুক্ত (কমপক্ষে এসপিএফ ৫০+) সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। স্কিনে খুব বেশী পরিমাণে ক্রিম বা অ্যালকোহল বেজড প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ এই ধরনের ফর্মুলেশন স্কিনে ময়লা–ধুলো বালি খুব সহজে টেনে নেয়,তাই পরিমাণ অনুযায়ী অ্যাপ্লাই করতে হবে। অনেক সময় বাহিরে থাকার কারণে বার বার মুখ ধোয়া সম্ভব হয় না। বাজারে আজকাল ফেশিয়াল রিফ্রেশিং টিস্যু বা ওয়াইপস পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়েও মুছে নিলে ফেস কিছুটা ক্লিন হয়। সম্ভব হলে কাপড়ের ফেস মাস্ক ব্যবহার করলে ভালো হয়।

 

চুলের যত্নে

  • ভালো মত চুল আঁচড়ানো

চুল সরাসরি বাতাসে থাকা ধুলো-ময়লার সংস্পর্শে আসলে হয়ে যায় ফ্রিজি অ্যান্ড আনম্যানেজেবল। এসময় স্ক্যাল্প হয়ে যায় অয়েলি কিংবা অনেক বেশী ড্রাই। স্ক্যাল্পে ময়লা ও অতিরিক্ত তেল জমে স্ক্যাল্প বিল্ড আপ শুরু হয়। সরাসরি ধুলো ময়লা থেকে এসে চুল আঁচরে নিতে হবে। এতে চুলে থাকা ময়লা –ধুলো বালি অনেকটাই শুকনো অবস্থাতেই ঝড়ে পড়ে। এবং বিল্ড আপের মতো সমস্যা অনেকটা কমে আসে।

  • নিয়মিত শ্যাম্পু করা

চুলে শ্যাম্পু করার সময় সবচেয়ে ভালো হয় সালফেট ফ্রী শ্যাম্পু ব্যবহার করলে। এই ধরনের মাইল্ড শ্যাম্পু প্রতিদিন হেয়ার ওয়াশ এর জন্য ব্যবহার করা যায় । এটি চুলে কোন ক্ষতি করে না। এরপর একটি হাইড্রেটিং মাস্ক যেমন আরগান অয়েল কিংবা শিয়া বাটার যুক্ত মাস্ক ড্রাইনেস কমিয়ে চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে চুল হয় সফট অ্যান্ড বাউন্সি।

  • চুলে তেল এর ব্যবহার

আবহাওয়া বা পরিবেশ যেমনই থাকুক অনেক সময় চুল বার বার ধুলে স্ক্যাল্প ড্রাই হয়ে যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার চুলে তেল দিয়ে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। অনেকে চুলে তেল দিয়ে সারারাত রেখে দেন। এটা না করাই ভালো। কারণ তেল চুলে সারারাত রেখে দিলে যাদের একনি প্রোন স্কিন তাদের একনির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে সেই সাথে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল ভেঙ্গে পড়ে। তাই চুলে তেল দিলে ২০ মিনিট-১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এক্সট্রা ময়েশ্চারাইজেশনের জন্য চাইলে চুলে হেয়ার সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।

 

  • স্কিনে ডিটক্সিফায়িং মাস্ক এর ব্যবহার

ডিটক্সিফাইং মাস্ক স্কিনে জিমে থাকা ময়লা ডিপলি ক্লিন করতে সাহায্য করে। এই ধরনের ডিটক্সিফাইয়িং মাস্ক ঘরে বসেই তৈরি করা যায়।

১.চারকোল ফেস মাস্ক

উপকরণ:

  • ১ চা চামচ মুলতানি মাটি
  • ১ চা চামচ চারকোল পাউডার
  • ১/২ চা চামচ মধু
  • ৩ চা চামচ পানি

সব একসাথে একটি পাত্রে মিশিয়ে নিয়ে মুখে ও গলায় থিন লেয়ারে সমান ভাবে ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চারকোল ত্বকে জমে থাকা ফ্রি র‍্যাডিকাল জার্মস পরিষ্কার করে সেই সাথে মুলতানি মাটি স্কিনে পিম্পল কমাতে সাহায্য করে। এই মাস্ক সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

 

২. কোকোনাট ক্লে মাস্ক

উপকরণ:

  • ২ চা চামচ বেন্টোনাইট ক্লে
  • ১ চা চামচ নারকেল তেল
  • ১/২ চা চামচ মধু

 

একসাথে মিশিয়ে ভালভাবে পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর সমান ভাবে মুখ ও গলায় অ্যাপ্লাই করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার স্কিনকে সফট করে ও ডালনেস কমিয়ে আনে।

 

পরিবেশ সব সময় পরিবর্তনশীল। বেঁচে থাকার সুবাদে আমাদের খাপ কাইয়ে নিতে হয়। তাই আমাদের কাজে কর্মে সব কিছুতেই সুস্থ থাকা অনেক বেশী গুরুত্বপুর্ণ। অনেক সময় ছোট ছোট কিছু যত্নে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাই আমাদের নিজেদের প্রতি অবশ্যই কিছুটা যত্নশীল হওয়া উচিৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *