Discover Natural Beauty Tips
পেপটাইড কি? স্কিনকেয়ারে পেপটাইড এর উপকারিতা
ত্বকের প্রয়োজন অনুযায়ী রূপচর্চা বা স্কিনকেয়ার রুটিন কার্যকর করতে অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কিছুদিন আগেও নিজের ত্বক নিয়ে এতো চিন্তা আমাদের মধ্যে দেখা যায়নি। আগে আমরা মনে করেছি, ত্বক সারাজীবন একই ধরনের হয়ে থাকে। তাই যে কোন প্রোডাক্ট ত্বকে ব্যবহার করলেই হলো। আসলেই কি তাই?
এই প্রশ্ন এখন সবার। বয়স, আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানো এবং আমাদের জীবনযাত্রা- এর সবকিছুর আমাদের ত্বকে সরাসরি এর প্রভাব পরে। তাই ত্বক সব সময় পরিবর্তনশীল। স্কিন কেয়ারে অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট বলতে আমরা মূলত ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড কিংবা হায়ালুরোনিক অ্যাসিডকেই চিনে থাকি। তবে স্কিনকেয়ারে এখন আরেকটি জনপ্রিয় অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো ‘পেপটাইড’।
অবশ্য এর পেছনে বেশ কিছু কারণও আছে। পেপটাইড স্কিন টেক্সচার স্মুদ রাখতে সাহায্য করে।
তবে সেটি কিভাবে ত্বকে কাজ করছে চলুন তা জেনে নেয়া যাক।
পেপটাইড কি?
পেপটাইড হলো অ্যামাইনো অ্যাসিডের একটি শর্ট চেইন ‘পলিপেপটাইড’ যা স্কিনে প্রোটিন গঠনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। প্রোটিন ত্বকে কোলাজেন, ইলাস্টিন ও কেরাটিন তৈরি করে। পেপটাইড এক কথায় আমাদের স্কিন টেক্সচার ইম্প্রুভ করে, স্কিন সফট রাখতে সাহায্য করে।
কোলাজেন, ইলাস্টিন ও কেরাটিন নিজে থেকেই আমাদের শরীরে তৈরি হতে থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে এই প্রোডাকশন প্রসেস স্লো হয়ে যায়। এতে স্কিনে ডালনেস চলে আসে। ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা দেয়।
স্কিন কেয়ারে পেপটাইড মূলত ৪ ধরনের দেখা যায়
- সিগনাল পেপটাইডস – এই জাতীয় পেপটাইড ত্বকের কোষ সক্রিয় করে আমাদের শরীরে থাকা কোলাজেন প্রোডাকশন ও ইলাস্টিন এর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এতে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বা স্কিন ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে। এতে ত্বকে বয়সের ছাপ কমিয়ে আনতে সহায়তা করে। যেমন- পালমিটয়েল টেট্রাপেপটাইড-৭ (Palmitoyl Tetrapeptide-7 ), পালমিটয়েল ট্রাইপেপটাইড-১ (Palmitoyl Tripeptide-1) , ম্যাট্রিক্সিল পালমিটয়েল পেন্টাপেপটাইড-৪ (Matrixyl (Palmitoyl Pentapeptide-4)।
- ক্যারিয়ার পেপটাইডস –এই পেপটাইড স্কিন রিপেয়ারের জন্যে, কোলাজেন প্রোডাকশন বৃদ্ধি করতে কপার ও ম্যাগনেসিয়াম এর যোগান দিয়ে থাকে। যেমনঃ কপার পেপটাইডস (কপার ট্রাইপেপটাইড-১ (Copper Peptides (Copper Tripeptide-1)
- নিউরোট্রান্সমিটার-ইনহিবিটার পেপটাইডস – এই ধরনের পেপটাইড আমাদের মুখের পেশী বা ফেসিয়াল মাসল রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে। এতে আমাদের স্কিনে স্মাইল লাইন্স ও রিংকেলস কমে আনতে সাহায্য করে। যেমনঃ অ্যাসিটাইল হেক্সাপেপ্টাইড-৮ (আর্জিরেলিন (Acetyl Hexapeptide-8 (Argireline)
- এনজাইম-ইনহিবিটিং পেপটাইডসঃ এই পেপটাইড ত্বকে কোলাজেন ভাঙতে সাহায্য করে। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং স্কিন টেক্সচার রাখে স্মুদ । এতে ভিজিবল রিংকেলস ও ফাইন লাইন্স কমে আসে। যেমনঃ ডাইপেপটাইড ডায়ামিনোবিউটিরয়েল বেঞ্জাইলামাইড ডায়াসিটেট (Dipeptide Diaminobutyroyl Benzylamide Diacetate).
পেপটাইড ব্যবহারের উপকারিতা
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক পেপটাইড আমাদের ত্বকের গঠনে কিভাবে সাহায্য করে।
রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমিয়ে আনে
পেপটাইড এর অণুগুলো তুলনামূলক বড় হওয়ায় স্কিন দ্রুত অ্যাবজর্ব হয়ে যায় এবং স্কিনের ডিপেস্ট লেয়ারে অর্থাৎ হাইপোডার্মিস লেভেলে সরাসরি কাজ করে। তে স্কিনে কোলাজেন ও ইলাস্টিন এর প্রোডাকশন বুস্ট করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং রিংকেলস ও ফাইন লাইনস কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
স্কিন রাখে হাইড্রেটেড
সময়ের সাথে আমাদের নিজেস্ব কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যেতে থাকে। কোলাজেন প্রোডাকশন কমে যাওয়ার সাথে সাথে ত্বকে এপিডার্মাল ওয়াটার লস হয় এবং ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক । ত্বকের এই হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে পেপটাইড কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে । এতে স্কিন ভেতর থেকে হয় উজ্জ্বল ও মসৃণ। আমাদের ত্বকের সুরক্ষা স্তর বা স্কিন ব্যারিয়ার এর কাজ হলো ত্বককে পরিবেশগত দুষণ ( ফ্রী রেডিক্যাল ড্যামেজ) ও সূর্যের অতিবেগুনী রশ্নি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখা। স্কিনে হাইড্রেশন লেভেল ঠিক থাকলে ত্বকের এই সুরক্ষা স্তর ভালো থাকে। পেপটাইড এই সুরক্ষা স্তর নতুন করে তৈরি করতে সাহায্য করে।
কোলাজেন প্রোডাকশন বুস্ট করে
আমাদের ত্বক নিজে থেকেই কোলাজেন প্রোডাকশন করতে থাকে। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির এবং বিভিন্ন ফ্রী রেডিক্যাল ড্যামেজ এর কারণে আমাদের শরীরে এই কোলাজেন উৎপাদন প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে কোলাজেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সুন্দর বলতে একদম ধবধবে ফর্সা গায়ের রং- কে বোঝায় না। গায়ের রং যেমনই হোক আপনার ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতাই হলো ত্বকের প্রকৃত সুস্থতা।
স্কিন ইলাস্টিসিটি
আচ্ছা, এখন স্কিন ইলাস্টিসিটি বা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বলতে আসলে কি বোঝায়? আমরা অনেক সময় স্কিন স্ক্রাব করি, ক্রিম ব্যবহার করি, তখন ত্বকে অনেক টান পরে। কিন্তু এই টেনে ধরা ভাব যখন আবার ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে মূলত এটাকেই বলা হয় স্কিন ইলাস্টিসিটি। আর্দ্রতা ঠিক না থাকলে স্কিন ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। তখন রিংকেলস ও ফাইন লাইনস ভিজিবল হয়। পেপটাইড ত্বকে ইলাস্টিন এর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে স্কিন থাকে সফট অ্যান্ড হেলদি।
স্কিন টাইটেনিং
বয়স কিংবা হরমোনাল সমস্যার জন্য আমাদের ত্বকে অনেক সময় ভাঁজ পড়ে যায়। পেপটাইড স্কিনে কোলাজেন প্রোডাকশন ট্রিগার করে এতে কোলাজেন বুস্ট হয়ে স্কিন টিস্যু ফার্ম করতে সাহায্য করে। স্কিনের এই ভাঁজ কমে আসে এবং থাকে সাপল অ্যান্ড সফট।
ত্বক রাখে মসৃণ
পেপটাইড স্কিন ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে। স্কিন টোন ইভেন হয় এবং ত্বক রাখে প্রাণবন্ত।
ব্রেকআউট কমিয়ে আনে
পেপটাইড সক্রিয় ভাবে একনি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। একনি প্রোন স্কিনে পেপটাইড সিরাম বা ময়েশ্চারাইজার হিসাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে তা সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
ত্বকে বয়সের ছাপ কমানোর জন্য অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে ‘রেটিনল’ কার্জকর হলেও প্রথম দিকে ত্বকে সামইয়িক অসুবিধা হতে পারে। কিন্তু ঠিক একই কারণে পেপটাইড হতে পারে বিগেনার অ্যান্ড বাজেট ফ্রেন্ডলি অপশন। তাই রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিনে পেপটাইড এর দীর্ঘস্থায়ী কার্যকারিতার জন্য ক্লিঞ্জার কিংবা ফেসওয়াশ এর স্কিনে থাকে এমন ক্রিম, এসেন্স, লোশন কিংবা সিরাম হিসেবে ব্যবহার করুন। যত্নে থাকুক আপনার সুন্দর ত্বক।