Discover Natural Beauty Tips
মেছতা বনাম হাইপারপিগমেন্টেশন- পার্থক্য কি এবং কেমন হবে স্কিনকেয়ার রুটিন

মুখে হালকা কিছু দাগ আর সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো বিভিন্ন ধরনের স্কিন কেয়ারের ব্যবহার। কোন কিছু না ভেবেই এসব প্রসাধনীর ব্যবহার ত্বকের সমস্যা ভালো করার বদলে উল্টো আরও বেশী খারাপ করে ফেলে। ত্বকের এমন কিছু সমস্যায় এই বিষয়টি বেশ ভালোভাবে পরিলক্ষিত হয়, যেমন – কালো দাগ এবং মেছতা । ত্বকের এই দুটো সমস্যার ধরণ খুব কাছাকাছি হলেও তার যত্ন বা চিকিৎসায় কিন্তু ভিন্নতা আছে। তাই সবার আগে জানতে হবে মেছতা এবং কালো দাগ আসলে কি এবং কেনো হয় এবং তার সমাধান কি।
ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন কি এবং কেনো হয়?
আমেরিকায় অবস্থিত অপটিমা ডার্মাটোলজি –এর একজন বিখ্যাত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ জিল বিকফোর্ড এর মতে ‘ত্বকে মেলানোসাইটিস থেকে নিঃসৃত মেলানিন যখন পরিমাণের চেয়ে বেশী উৎপাদন হয়, সেই অতিরিক্ত অংশই হলো মুলত হাইপারপিগমেন্টেশন।‘
এই ধরনের দাগ গুলো সাধারণত যাদের স্কিনে একজিমা বা একনি আছে তাদের, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় শরীরে হরমোন এর পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি দেখি যায়। এইজন্য একে ‘গর্ভকালীন মুখোশ’ ও বলা হয়ে থাকে।
কিভাবে বুঝবো এটা হাইপারপিগমেন্টেশন?
হাইপারপিগমেন্টেশন সাধারণত বড় লালচে কিংবা মেটে রঙ শরীরে বিভিন্ন অংশ যেমন – মুখ, গলা, ঘাড় ও হাতের (যে অংশগুলো সরাসরি সূর্জের সংস্পর্শে আসে) আলাদাভাবে ছড়িয়ে থাকে। অনেক সময় এগুলো ছোট ছোট তিলের মত (সান স্পটস) দেখতে পাওয়া যায়।
হাইপারপিগমেন্টেশন এর ধরন ২ রকম:
- পোস্ট ইনফ্লেম্যাটরি হাইপারপিগমেন্টেশন (PIH)- এই ধরনের পিগমেন্টেশন বা দাগ সাধারণত কোন ধরনের ক্ষত, যেমন একজিমা বা একনির কারণে দেখা যায়। একনি, একজিমা বা ত্বকে অন্যান্য সমস্যা কমিয়ে আনতে মেলানোসাইটিস সেল অতিরিক্ত মেলানিন উৎপাদন করে থাকে। তখন এই ধরনের ছোট কালো দাগ ত্বকের বিভিন্ন অংশে দেখা যায়। তবে এই ধরনের দাগ চিকিৎসা এবং সেই সাথে সঠিক উপায়ে ত্বকের যত্নের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়।
আরেকটি হলো মেছতা বা মেলাজমা যেটি সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি।
- মেছতা বা মেলাজমা কি?
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে মেছতা বা মেলাজমা (Melasma) হলো এক ধরনের হাইপারপিগমেন্টেশন, যা ত্বকের নির্দিষ্ট অংশে মেটে কিংবা ধূসর রঙ এর প্রতিসম বন্টন রুপে কিংবা সহজ ভাবে বলতে গেলে সমান ভাবে জালের মতো একই জায়গায় ছড়িয়ে থাকে।
কেনো হয় মেছতা?
মেছতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। আমাদের গায়ের রঙ নির্ধারণের জন্য ত্বকের উপরিভাগে মেলানোসাইটিস নামে এক ধরনের বিশেষ কোষ বা সেল, মেলানিন নামক রঙ্গক তৈরি করে। তার মানে গায়ের রঙ যত বেশী গাঢ় বুঝতে হবে তার শরীরে মেলানিনের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশী। মেলানিন আমাদের ত্বক, চুল ও চোখের জন্য নির্দিষ্ট রঙ তৈরি করার পাশাপাশি, সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনী রশ্নি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতেও সাহায্য করে।
কিন্তু অনেক সময় মেলানিনের অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে ত্বকের কিছু জায়গায় যেমন- দুপাশের গালে, কপালে ও ঠোঁটের ওপরে দিকে জালের মতো মেটে বা ধূসর রঙ এর ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। মেলানিনের কিছু অংশ আমাদের ত্বকের ভেতরে থেকে যায়। দীর্ঘ সময় কোন প্রকার সুরক্ষা ছাড়াই সূর্যের আলোতে থাকলে, শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বিশেষ করে গর্ভকালীন অবস্থায়, চিকিৎসার জন্য কোন ওষুধ নিলে কিংবা বংশগত কারণে এই মেলানিনের বাড়তি অংশ দাগ হিসেবে ত্বকে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। নির্দিষ্ট জায়গায় খুব বেশী পরিমাণে থাকলে বুঝে নিতে হবে এটাই মেছতা বা মেলাজমা। আরেকটি বিষয় হলো, কোন ক্রিম বা সিরাম ব্যবহারে মেছতা কখনো একবারে ভালো হয় না। এমনকি লেজার ট্রিটমেন্ট দিয়ে সাময়িক সময় ভালো ফলাফল পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। মেছতার অবস্থা খুব বেশী খারাপ হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
তাহলে ত্বকের যত্নে কি কি উপাদান ব্যবহার করতে হবে?
সানস্ক্রিন- আপনি আপনার ত্বকের যত্নে যত টাকাই খরচ করুন না কেনো, যদি সানস্ক্রিন একদমই এড়িয়ে চলেন, তাহলে কোন ধরনের পণ্যের সঠিক কার্যকারিতা এবং তার ফলাফল কোনটিরই ভালো কিছু হবেনা। হাইপারপিগমেন্টেশন থেকে মেছতা হয়ে যাবার আরেকটি প্রধান কারণ হলো ঠিকমতো সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা। অরক্ষিত অবস্থায় সূর্যের ক্ষতিকারক ইউভি রেডিয়েশন আপনার ত্বকের নিচের স্তর অবদি নষ্ট করে ফেলে। এতে ত্বকে ক্যান্সার হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই বাইরে বের হবার ১৫-২০ মিনিট আগে, বিশেষ করে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যে সময় সূর্যের অতিবেগুনী রশ্নি বা ইউভি রেডিয়েশন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী থাকে, ঠিক সেই সময় ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানক্রিন ব্যবহারের পর ডাবল ক্লিঞ্জিং করতে ভুলবেন না যেনো।
এখন কারও ত্বকে যদি হাইপারপিগমেন্টেশনএর মতো সমস্যা দেখা যায় তাহলে তা কমিয়ে আনতে স্কিনকেয়ার রুটিনে বিভিন্ন কার্যকরী উপাদান যেমন- হাইড্রকুইনোন, রেটিনল, ভিটামিন সি, আলফা আরবুটিন এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যেমন- অ্যালোভেরা,গ্রীন টি, লিকোরিস, মিল্ক প্রোটিন, হলুদ, রাইস ওয়াটার, পমিগ্রানেট সমৃদ্ধ যোগ করুন।
মেছতার জন্য বিভিন্ন কার্যকরী উপাদান যেমন- ২% থেকে সর্বোচ্চ ৫% মাত্রার হাইড্রকুইনোন, ট্রেটিনইন, ভিটামিন সি, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড এবং নিয়াসিনামাইড এবং প্রাকৃতিক উপাদান যেমন- হলুদ, শসা, পাপায়া কিংবা টমেটো ইত্যাদি স্কিনকেয়ার রুটিনে ব্যবহার করুন।
কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখুন
মেছতা বা হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যায় ব্যবহৃত রেটিনল বা হাইড্রোকুইনন জাতীয় উপাদান বিশেষ করে যাদের মধ্যে ‘ভিটামিন এ’ এর উপস্থিতি অনেক বেশী সেগুলো গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপান করানো মায়েরা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং ত্বকের যত্নে যে কোন ধরনের পণ্য ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আমরা সব সময় চেষ্টা করি ত্বকের যত্নে সবচেয়ে ভালো কিছু ব্যবহার করা। কিন্তু অনেক সময় ত্বকের ধরণ কিংবা সমস্যা না বুঝেই আমরা নানা রকম প্রসাধনী ব্যবহার করি। ত্বকের মানিয়ে নিয়ে নেবার বিষয়টিকে বার বার উপেক্ষা করি। তাই আশানুরূপ ফলাফল একেবারে পাইনা বললেই চলে। সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন পণ্যের সঠিক মাত্রায় ব্যবহার এবং ধৈর্য । সমস্যা সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন। ত্বকের সমস্যা বুঝে সঠিক প্রসাধনী ব্যবহার করলেই মিলবে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান। যত্নে থাকুক,আপনার সুন্দর ত্বক।