BANGLA

সান ড্যামেজ থেকে ত্বকের সুরক্ষা

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে সূর্য প্রতিটি প্রাণের উৎস ও সঞ্চারিণী শক্তি। কিন্তু গত কয়েক বছরে সূর্যের প্রখরতা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশী । বায়ুমন্ডলে ওজোন স্তরে তারতম্য যার প্রধান কাজই হলো সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনী রশ্নি শোষণ করে নেয়া এবং পরিবেশগত বিভিন্ন দূষ কারণে দিন দিন পৃথিবীতে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব আমাদের ত্বকে গুরুত্বর ভাবে পরিলক্ষিত হয় । ঘরে কিংবা বাইরে আমাদের প্রতিনিয়তই কোন না কোন ভাবে সূর্যের সংস্পর্শে আসতে হয়। চিন্তার বিষয় হল , ত্বকের যত্নে আমরা বিভিন্ন রকমের প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেও সূর্যের ক্ষতিকর দিক থেকে ত্বকের সুরক্ষার বিষয়টি আমরা একদমই এড়িয়ে চলি। এর ফলে ত্বকে ট্যানিং একনি ও ত্বকে বয়সের ছাপ সহ নানা সমস্যা দেখা যায়। সঠিক নিয়মে সানস্ক্রিন ব্যবহারের পাশাপাশি কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

 

সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন

আমাদের ত্বককে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর রাখতে সানস্ক্রিনের বিকল্প নেই। কিন্তু আপনি কি জানেন সানস্ক্রিন আসলে কী কাজ করে? সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি আমাদের ত্বককে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রশ্মির কারণে ত্বক পুড়ে যায়, কালো দাগ পড়ে এবং এমনকি স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায়।

সানস্ক্রিন হলো এমন এক ধরনের ক্রিম, জেল বা লোশন এর ফর্মুলেশন যা এই ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। সানস্ক্রিনে থাকে SPF বা সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর, যা নির্দেশ করে যে সানস্ক্রিনটি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে কতটা রক্ষা করতে পারবে। সূর্য থেকে দুই ধরনের অতিবেগুনি রশ্মি নির্গত হয়, যা ত্বকের ক্ষতির জন্য দায়ী।

  • UVA (Ultra Violet Type-A) ত্বকের গভীর স্তর অর্থাৎ ত্বকে হাইপোডার্মিস লেয়ার অবধি প্রবেশ করতে সক্ষম। এটি ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট করে দেয়, যার ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে, রিঙ্কেলস দেখা দেয় এবং ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়।
  • UVB (Ultra Violet Type-B) এটি ত্বকে ওপরের স্তর ড্যামেজ করে সানবার্নের সৃষ্টি করে । UVB রশ্মি ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

SPF যত বেশি হবে তত ভাল UVB থেকে সুরক্ষা দিবে এবং PA যত ++ হবে তা তত ভাল UVA থেকে সুরক্ষা দিবে। তাই বাইরে যাবার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে শুকনো ও পরিষ্কার ত্বকে স্কিন সুইটেবল ও ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এবং অবশ্যই প্রতি ২ ঘন্টা পর পর সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করতে হবে।

 

 

 

ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিনের ব্যবহার

সানস্ক্রিন সম্পর্কে ধীরে ধীরে এখন সবাই কম বেশী সচেতন হচ্ছে।  কিন্তু অনেকেই এখনো মনে করেন স্কিনে যে কোন ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায় । এটি ঠিক নয়। আবার যাদের স্কিনে একনি বা ব্রণের সমস্যা অনেক বেশী তারা সানস্ক্রিন এর ব্যবহার একদমই এড়িয়ে চলেন। মনে করেন সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে স্কিন অয়েলি হয়ে আরও বেশী সমস্যা হয়। একটি জিনিস মনে রাখতে হবে সূর্যের সংস্পর্শে আসার আগে ত্বকে যদি কোন ধরনের যদি প্রস্তুতি না নেয়া হয় তাহলে একনি , ডার্ক স্পটস ,রিঙ্কলেস ও ফাইন লাইন্সের মতো সমস্যা আরো বেড়ে যায়। আবার সান বার্ন হওয়ার ফলে স্কিন অনেক বেশী সেনসিটিভ হয়ে পড়ে, তখন স্কিনে ইরিটেশন দেখা দেয়। তাই ত্বকের চাহিদানুযায়ী বাজারে আজকাল অনেক ধরনের সানস্ক্রিন দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিনের প্রয়োজনীয়তা ও ফর্মুলেশনও ভিন্ন হতে পারে।

  • অয়েলি বা অ্যাকনে প্রোন স্কিনের জন্য:

এই ধরনের ত্বকের জন্য সানস্ক্রিন বেছে নেয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যেমন- যেসব সানস্ক্রিন নন-কমেডোজেনিক অর্থাৎ স্কিনে পোরস ক্লগ করে না এমন ওয়াটার বা জেল ফর্মুলেশনের মিনারেল বেজড সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আর কেউ যদি ক্যামিকাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চায় তাহলে অকটিসালেট এবং অ্যাভোবেনজোন এর মত উপাদান আছে এমন সানস্ক্রিন একনি প্রোন স্কিনের জন্য ভালো।

  • ড্রাই স্কিনের জন্য:

শিয়া বাটার, গ্লিসারিন, সিরামাইড ও হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এমন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল বেজড সানস্ক্রিন ত্বকে হাইড্রেশন এর পাশাপাশি সানবার্ন থেকেও সুরক্ষা দেয়।

  • কম্বিনেশন স্কিনের জন্য:

স্কিনে ম্যাটিফায়িং ফিনিশিং দেয় এমন ফর্মুলেশনের সানস্ক্রিন কম্বিনেশন স্কিনে দ্রুত অ্যাবজর্ব হয় এবং স্কিন হাইড্রেট করে এমন লাইট ওয়েট সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

  • সেনসিটিভ স্কিনের জন্য:

অ্যালোভেরা কিংবা কামোমাইল এই ধরনের ফ্রেগ্রেন্স ফ্রি ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। এটি স্কিন ইরিটেশন কমিয়ে স্কিনকে সানবার্ন থেকে সুরক্ষিত রাখে।

 

লম্বা ও আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করুন

সাধারণত দিন যত বাড়তে থাকে সূর্য এর প্রখরতা বৃদ্ধি পায়। অনেকক্ষণ থাকার ফলে অনেক সময় স্কিনে ট্যানিং বা অতিরিক্ত গরমে সানবার্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে লম্বা হাতার জামা এবং ফেস কভার করার জন্য স্ক্রাব বা কাপড়ের মাস্ক পড়ে গেলে ভালো হয়। এতে স্কিনে সরাসরি সূর্যের তাপ প্রবেশ করতে পারেনা। এবং ত্বককে সান ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

 

প্রতি ২-৩ ঘন্টা পর পর সাসন্সক্রিন অ্যাপ্লাই করা

আমরা যখন বাইরে যাই, সরাসরি রোদে থাকার কারণে যাই আমাদের সানস্ক্রিনের সক্রিয় উপাদান এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই ২ থেকে ৩ ঘন্টা পরপর সানস্ক্রিন রি অ্যাপ্লাই করতে হবে।

 

ছায়ায় থাকুন

অতিরিক্ত রোদে বেশী সময়ে থাকলে UV ray ত্বকের গভীরতম লেয়ারে প্রবেশ করে আমাদের DNA- এর গঠনকে পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। এসময় নির্দিষ্ট বয়সের আগেই ত্বকে রিঙ্কেলস ও ফাইন লাইন্স পড়তে দেখা যায় । এটাকে বলা হয় ফটোএজিং (Photoaging) অন স্কিন। অর্থাৎ সময়ের আগেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যাওয়া। তাই সম্ভব হলে বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা ব্যবহার কিংবা ছায়া আছে এমন জায়গায় থাকা উচিৎ।

 

 

ত্বকের যত্নে সুস্থ ও সুন্দর জীবন ধারণের জন্য সব দিকেই খেয়াল রেখে চলতে হয়। সহজ কিছু অভ্যাস আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা মেনে চললে ত্বকের অনেক বড় সমস্যার সমাধান খুব সহজেই পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *