BANGLA, Blog

স্কিন পার্জিং কেন হয় এবং এর সমাধান কি?

ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রতিদিনই আমরা বিভিন্ন পণ্য ব্যবহার করি। ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতা ধরে রাখতে এই চর্চাগুলো আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আবার বয়স এবং সময়ের সাথে জীবনযাপনে নানাবিধ পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের ত্বকে দৃশ্যমান। বলা যায় আমাদের ত্বক এক ধরনের ক্যানভাসের মতো , যেখানে তার রুপচর্চায় বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করা হয়।

ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত এইসব প্রসাধনীর উপকারী উপাদানগুলো ঠিক কিভাবে কাজ করে সেটি জানা অত্যন্ত জরুরি। যেমন – হায়ালুরোনিক অ্যাসিড রেগুলার স্কিন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অন্যদিকে রেটিনল একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করতে বলা হয়। কেন এই মাত্রা নির্ধারণ করা হয় ? কারণ এসব অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস যখন আমরা ব্যবহার করতে শুরু করি, তখন স্কিনে এই প্রোডাক্ট গুলো ত্বকের সমস্যায় দ্রুত কাজ করে। এই প্রক্রিয়ায় কখনো কখনো ছোট ছোট পিম্পল দেখা যায়। স্কিনে আগে থেকে একনির সমস্যা না থাকলে চিন্তার কোন কারণ নেই। এর মানে হলো এটি ধীরে ধীরে স্কিনে অ্যাডজাস্ট হতে শুরু করেছে এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর সেটি ভালো হয়ে যাবে। এটিই হলো স্কিন পার্জিং।

স্কিন পার্জিং কি?

মানবদেহে সেল রিজেনারেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে। যখন আমরা নতুন কোনো পণ্য ত্বকে ব্যবহার করি, এটি আস্তে আস্তে ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় সাময়িকভাবে ত্বকে ছোট ছোট পিম্পলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ঘটনাকেই স্কিন পার্জিং বলা হয়। তার মানে স্কিনে সেই প্রোডাক্ট ইফেক্টিভলি কাজ করছে।

প্রোডাক্টে থাকা অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস স্কিনে অ্যাবজর্ব হয়ে দ্রুত কাজ শুরু করে। এই উপাদানগুলো স্কিনে আপকামিং একনি সৃষ্টিকারী জীবাণু ত্বকের উপরিভাগে পোরসে পাঠিয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম সেই জায়গায় হোয়াইট ব্লাড সেল পাঠিয়ে হিল করতে শুরু করে। ভেতরে হতে থাকা ইনফ্ল্যামেশন বা পসিবল একনি ত্বকে ছোট ছোট পিম্পল এর মতো দেখা যায়। যেটি অল্প সময়ের মধ্যে সেরে যায়।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, যদি স্কিন সুইটেবল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় তখনো কি স্কিন পার্জিং হবে? হ্যাঁ। ঠিক তখনো স্কিন সুইটেবল নতুন যে কোন প্রোডাক্ট ব্যবহারে স্কিন পার্জিং হতে পারে। এটি একটি পজিটিভ সাইন। নতুন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে তা ত্বক শোষণ করে নেয়। তখন সেই প্রোডাক্টে থাকা ইফেক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস স্কিনের সেল টার্নোভার এর প্রসেস কে দ্রুত করে। এতে ত্বকের উপরিভাগের ড্যামেজড স্কিন লেয়ার সরে যেতে থাকে এবং স্কিন সেল রিজেনারেট হয়। ত্বক ভেতর থেকে হয় গ্লোয়িং ও সফট ।

 

কিভাবে বুঝবো এটি একনি না স্কিন পার্জিং?

স্কিন পার্জিং এর সময় ছোট ছোট বাম্পস অনেকটা একনির মতো দেখতে হলেও একনি ও স্কিন পার্জিং এর মধ্যে পার্থক্য আছে। পার্জিং এর সময় যে বাম্পস দেখা যায় তা দেখতে লাল কিংবা সাদা ছোট ছোট দানার মতো। এগুলোকে বলা হয় প্যাপিউলস । অন্যদিকে একনির আকার বড় সাদা সিস্টের মতো ব্যাথা করে ও অস্বস্তিকর। পার্জিং স্কিন কমন কিছু জায়গা যেমন- কপাল, গালের দুপাশ কিংবা থুতনিতে দেখা যায়। কিন্তু একনি এই জায়গা বাদেও ত্বকের এমন অংশে দেখা যায় যেখানে আগে কখনোই হয়নি।

স্কিন পার্জিং কতদিন থাকে?

স্কিনে একনি কবে ভালো হবে সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায়না। একনির জন্য প্রোপার মেডিকেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নতুন কোন প্রোডাক্ট ব্যবহারের অল্প সময়ের মধ্যেই স্কিন পার্জিং শুরু হয়। স্কিন পার্জিং সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যেই ভালো হয়ে যায়।

স্কিন পার্জিং হলে করণীয় কি?

জেন্টাল ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন

স্কিন পার্জিং হলে নতুন করে সরাসরি কোন ট্রিটমেন্ট ব্যবহার না করে মাইল্ড ফেসওয়াশ বা ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন। পর্যায়ক্রমে টোনার, সিরাম ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

সানস্ক্রিনের ব্যবহার

পার্জিং হয়েছে বলে সানস্ক্রিন স্কিপ করতে হবে এই ব্যাপারটি সঠিক নয়। এই সময় স্কিন সেনসিটিভ হয়ে যায়। তাই সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে স্কিন ইরিটেশন হতে পারে। এতে পার্জিং এর সমস্যা বেড়ে যায় । তাই বাহিরে যাওয়ার আগে অবশ্যই ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

নিজের জিনিস পত্র পরিষ্কার রাখুন

তোয়ালে, বালিশের কভার বা রুমাল ইত্যাদি, আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখুন। অন্য কারো এই ধরনের জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস এর ব্যবহার

স্কিন কেয়ারে বিভিন্ন অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস যেমন- সেরামাইডস, পেপটাইডস,হায়ালুরোনিক অ্যাসিড যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।

বার বার হাত দিয়ে খোঁচা না দেয়া

পিম্পল হাত দিয়ে বার বার ধরবেন না। এতে করে ইনফকেশন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

 

নতুন কোন স্কিন কেয়ার ব্যবহারের আগে অবশ্যই সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। যেহেতু স্কিন পার্জিং ঠিক হতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন , তাই সামনে যদি কোন অনুষ্ঠান থাকে তাহলে সেই সময় নতুন কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই ভালো। স্কিন পার্জিং একটি পজিটিভ সাইন। এর মানে হল আপনার ব্যবহৃত প্রোডাক্ট সঠিকভাবে কাজ করছে। নির্দিষ্ট সময়ের পর ও যদি স্কিন পার্জিং ভালো না হয় তাহলে সেই প্রোডাক্ট ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে কিংবা একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিতে হবে। আপনার ত্বক হোক কোমল,সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *