Discover Natural Beauty Tips
হরমোনাল একনিতে ত্বকের যত্ন
ত্বকের সুস্থতা শুধু আমাদের দাগহীন উজ্জ্বলতাই দেয় না, তা নিজেকে সুন্দর ভাবে কোন কাজে উপস্থাপন করার আত্নবিশ্বাস যোগায়। তাই হাজারো ব্যাস্ততার মাঝে আমরা চেষ্টা করি কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজের ত্বকের যত্ন নেয়া। তবে অনেক সময় ঠিক মতো বেসিক স্কিন কেয়ার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরেও হঠাৎ করে একনি অনেক বেড়ে যায়। আবার এমন জায়গায় একনি হচ্ছে যেখানে এর আগে কখনো হয়নি। আবার একেবারেও ভালো হচ্ছে না।
কেনো হচ্ছে এই সমস্যা? এই ধরনের একনির সমস্যাকে বলা হয় হরমোনাল একনি।
হরমোনাল একনি কি এবং কেনো হয়?
আমাদের শরীরের যত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেনো ঠিক মতো কাজ করে তার জন্যে যে কর্টিসোল, গ্রোথ হরমোন, অ্যাস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন, প্রোজেস্টেরন- এর মতো বিভিন্ন হরমোন কাজ করে । এসব হরমোন আমাদের শরীরে থাকা বিভিন্ন গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হতে থাকে। যা মানুষের শরীরের স্বাভাবিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হরমোনাল এই নিঃসরণ ওঠানামা করলেই সাধারণত কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যার কিছু কারণ আছে। যেমন- ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন,
- মানসিক চাপ,
- মেয়েদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS),
- মেনোপোজ,
- অনিয়িমিত মাসিক
ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আমাদের হরমোন ইনব্যালেন্স হয়ে যায়।
ত্বকে এর প্রভাব বেশ গুরুতর হয়ে ওঠে। এই সময় টেস্টোস্টেরন আমাদের স্কিনে অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন শুরু করে। যার ফলে আমাদের ত্বকে একনি হতে শুরু করে। হরমোনাল একনি সব সময় এমন জায়গায় হবে যেখানে আগে কখনো হয়নি। এটি সাধারণত মুখে, চিবুকে, গলায়, বুকে ঘাড়ে কিংবা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভেতরে পুঁজ সহ ফুলে ওঠে। এই ধরনের একনির প্রবণতা কিছু সময়ের জন্য কমে আসলেও, তার রেশ ত্বকে রয়ে যায়। সম্পূর্ণ রুপে ঠিক হতে সাধারণত ৮-১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ব্যাক্তি ও সমস্যা ভেদে এই প্রবণতা কম বেশী হতে পারে।
হরমোনাল একনি হলে স্কিন কেয়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিৎ?
চলুন দেখে নেয়া যাক
জেন্টাল ক্লিঞ্জার
একনি প্রোন স্কিন অনেক বেশী সেনসিটিভ হয়ে যায়। তাই স্যালিসিলিক, অ্যালজেইক অ্যাসিড, টি ট্রি , অ্যালোভেরা কিংবা গ্রীন টি সমৃদ্ধ জেন্টাল ক্লিঞ্জার ব্যবহার করুন। এই ধরনের ইনগ্রেডিয়েন্ট একনির ফোলা ভাব বা ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাব অনেকটা কমে আসে।
টোনার
হরমোনাল একনির মূল কারণ হলো স্কিনে এক্সেস সিবাম প্রোডাকশন। অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশনের কারণে ত্বকের তৈলাক্ততা বৃদ্ধি পায়। আমাদের ত্বকের পিএইচ লেভেল ৫-৭ মাত্রায় থাকলে সেটি আমাদের স্বাভাবিক পিএইচ লেভেল। ৭ এর বেশী হলে স্কিন ড্রাই হয়ে যায়। স্কিনে হরমোনাল একনি থাকলে তার ইরিটেশন বাড়িয়ে দেয়। তাই স্কিনের এই পিএইচ লেভেল ঠিক রাখতে ফেইস ক্লিঞ্জিং এর পর টোনার ব্যবহার করুন। টোনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্যালিসিলিক অ্যাসিড কিংবা গ্লাইকোলিক অ্যাসিড যুক্ত এক্সফোলিয়েন্ট টোনার ব্যবহার করলে তা একনির জন্য ভালো কাজ করে।
একনি কেয়ার ট্রিটমেন্ট
দিনের বেলা একনির জন্য অ্যালজেইক কিংবা নিয়াসিনামাইড আছে এমন সিরাম বা এসেন্স ত্বকে ব্যবহার করুন। সেই সাথে ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। তবে রাতে একই স্কিন কেয়ার রুটিনে শুধু মাত্র রেটিনল বা আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (AHA) যুক্ত সিরাম বা এসেন্স সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
ময়েশ্চারাইজার
এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাইট ওয়েট, অয়েল ফ্রী- জেল বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এই ধরনের ময়েশ্চারাইজার ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব কমায় এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
সানস্ক্রিন
হরমোনাল একনি প্রোন স্কিনের জন্য নন-কমেডোজেনিক, অয়েল ফ্রী এবং লাইট ওয়েট সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে পোরস ক্লগড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। এতে স্কিনে একনিও কমে আসে। রেগুলার সানস্ক্রিন এর জন্য মিনারেল বেজড সানস্ক্রিন বেছে নিন। ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্টে জিঙ্ক অক্সাইড, টাইটেনিয়াম ডাইঅক্সাইড কিংবা নিয়াসিনামাইড আছে কিনা দেখে নিন। এই ধরনের উপাদান ত্বকে কোনো রকম ইরিটেশন ছাড়াই সূর্যের অতিবেগুনী রশ্নি থেকে ত্বককে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিয়ে থাকে। স্কিনে ডাবল ক্লিঞ্জিং একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া যাবেনা। সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে অবশ্যই মাইসেলার ওয়াটার দিয়ে ডাবল ক্লিঞ্জিং করে নিতে হবে।
তাছাড়া ঘরোয়া উপায়ে কিছু ফেস মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
১.গ্রিন টি ও মুলতানি মাটি মাস্ক
১ টেবিল চামচ গ্রিন টি (ঠাণ্ডা করা) ও ১ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন, তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ত্বকের তৈলাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করে এবং একনি কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
২. শশা ও অ্যালোভেরা মাস্ক
১ টেবিল চামচ শশার রস ও ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি একনি প্রোন স্কিনে ইরিটেশন কমাতে সাহায্য করে।
কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন :
- দিনে অন্তত ২ বার মুখ ধুয়ে নিন।
- বালিশের কভার ও তোয়ালে নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন।
- অতিরিক্ত চিনি ও তেল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন (হরমোনাল একনির ক্ষেত্রে অনেক সময় এগুলো প্রভাব ফেলে)।
হরমোনাল একনি একেবারে ঠিক হওয়া বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এই সময় ত্বক অনেক বেশী সেনসিটিভ হয়ে যায়। তাই স্কিন কেয়ারে বেছে নিতে হবে একনি প্রোন স্কিন সুইটেবল ইনগ্রেডিয়েন্টস। যদি এই ধরনের একনির সমস্যা খুব বেশী হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ভালো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ- এর পরামর্শ নিতে হবে। নিজের প্রতি খেয়াল রাখুন এবং যত্নে থাকুক আপনার সুন্দর ত্বক।