হিজাবে চুলের যত্ন

পোশাক-সজ্জায় হিজাবের ব্যবহার, ধর্মীয় মূল্যবোধ এর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশের পাশাপাশি আত্নশুদ্ধি ও পরিপূর্ণতার এক অনন্য  প্রয়াস। তাই যারা হিজাব ব্যবহার করছেন, তারা সুন্দর এই লেবাস পড়ার ক্ষেত্রে সব দিক খেয়াল রাখেন। কিন্তু যখন প্রসঙ্গ আসে এই অবস্থায় চুলের যত্ন নেয়ার তখন আসলে অনেকে চিন্তায় পরে যান কিভাবে হেয়ার কেয়ার করা যায়। স্পেশালি সামার টাইমে। আমাদের দেশে বাতাসে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি থাকায় চুল ভেতর থেকে ঘেমে যায়। এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়, স্ক্যাল্প বিল্ড আপ, ড্যানড্রাফ ও হেয়ার ফল শুরু হয়ে যায়।

তাই আমাদের আজকের আয়োজনে থাকছে হিজাব ওয়্যারে কিছু সিম্পল হেয়ার কেয়ার স্টেপস।

চুল শুকিয়ে নিন

হিজাব পরে নেয়ার আগে চুল আঁচড়ানোর পর যাতে ভেতরে ভেজা না থাকে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখুন। যেহেতু হিজাবে লম্বা সময়ের জন্য চুল ঢাকা থাকে তাই ভেজা অবস্থায় চুল বাঁধলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। তখন স্ক্যাল্পে ইরিটেশন শুরু হয় এবং সেই সাথে অনেক বেশী চুল ঝরে পরে। তাই হিজাব এর আগের চুল ফ্যান, রোদ কিংবা হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ভালোমতো শুকিয়ে নিন।

চুল খুব জোরে টেনে বাঁধবেন না

হিজাবে সুন্দর ভাবে চুল সেট করার জন্য চুল অনেক জোরে টেনে বাঁধবেন না। এতে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে হেয়ার ফল হতে পারে। যেহেতু চুল হিজাব দিয়ে ঢাকা থাকে তাই চুল হালকা ভাবে সেট করুন। এতে আপনি সারাদিন কমফোর্টেবল হয়ে কাজ করতে পারবেন।

শ্যাম্পু ব্যবহার করুন

যেহেতু চুল হিজাবেই ঢাকা থাকে তাই অনেকে মনে করেন চুলে এত শ্যাম্পু না করলেও চলবে। কারণ চুল তো আর তেমন ময়লা হচ্ছে না। একটি বিষয় আমাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমাদের স্ক্যাল্প প্রতিনিয়ত সিবাম প্রোডিউস করছে। তাই শ্যাম্পু যদি নিয়ম করে না করা হয় তাহলে স্ক্যাল্প তেলতেলে হয়ে যায়। তখন জট ছাড়ানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তাই অবশ্যই নিয়ম করে হেয়ার অয়েলিং এরপর জেন্টাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন। সবচেয়ে ভালো হয় সিলিকন ফ্রী শ্যাম্পু যদি ব্যবহার করা হয়। সিলিকন ফ্রী শ্যাম্পু চুলে প্রতিদিন ব্যবহার করা যায়। তাই চুল সুস্থতায় সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।

হেয়ার ট্রিমিং

স্প্লিট এন্ডস বা চুলের আগা ফেঁটে যাওয়ার মতো সমস্যা এড়াতে রেগুলার হেয়ার কাট নিলে ভালো। চুলে স্প্লিট এন্ডস থাকলে হেয়ারফল হয় অনেক বেশী। সেই সাথে চুলে ফ্রিজিনেস দেখা দেয়। তাই অবশ্যই ৬-৮ সপ্তাহ পর চুলে হেয়ার ট্রিমিং সেশন নিন। হেয়ার কালার বা কোন হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিলে হেয়ার স্পা বা কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারেন।

চুল কিছুক্ষণ খুলে রাখুন

সারাদিনে জন্য হিজাবে চুল ঢাকা থাকে। অনেক সময় ঘাম বা এক্সেস সিবাম প্রোডাকশনের জন্য চুলের গোঁড়া নরম হয়ে যায় এবং চুল মাঝখান থেকে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। আবার অনেকে হিজাবের নিচে এক্সট্রা ক্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। তাই দিনে কিছু সময়ের জন্য চুল খোলা রাখুন। আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে চুল থাকে ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।

হিজাবে আরামদায়ক কাপড় ব্যবহার করুন

হিজাবের জন্য নরম সুতি বা সিল্কের কাপড় ব্যবহার করুন। এই ধরনের কাপড় চুলের ভেতরের বাতাস চলাচলে সাহায্য করে। সারাদিনের ব্যবহারের জন্য বেশ আরামদায়ক হওয়ায় অনেক গরমেও অস্বস্তিকর লাগে না। হিজাব পড়ার সময় খুব বেশী টাইট করে বাঁধবেন না। সুন্দর পরিপাটি করে সময় নিয়ে হিজাবের জন্য স্কার্ফ ব্যবহার করুন।

ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন

চুলে এক্সট্রা নারিশমেন্ট এর জন্য নিচে দেয়া এই ন্যাচারাল হেয়ার মাস্ক গুলো ব্যবহার করতে পারেন।

১. দই ও মধুর হেয়ার মাস্ক

২ টেবিল চামচ টকদই এবং ১ টেবিল চামচ মধু দুইটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে স্ক্যাল্প ও চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দই চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে এবং মধু চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

২. নারকেল তেল ও অ্যালোভেরা মাস্ক

২ টেবিল চামচ নারকেল তেল + ২ টেবিল চামচ হালকা গরম করে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে অ্যাপ্লাই করুন। ১ ঘণ্টা রেখে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরা জেল চুলের গোড়া মজবুত করতে ও খুশকি দূর করতে কার্যকর।

৩. কলা ও অলিভ অয়েলের হেয়ার মাস্ক
১ টি পাকা কলা + ১ টেবিল চামচ কলা মিহি করে পেস্ট বানিয়ে তাতে অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। ২০-৩০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। কলা ও অলিভ অয়েল শুষ্ক ও রুক্ষ চুলে হাইড্রেশন দেয় এবং চুল করে সফট অ্যান্ড শাইনি।

চুলের যত্নে আমরা আসলে কোন আপোষ করতে চাইনা। আবার এদিকে হিজাবের মাধ্যমে চুলের ড্যামেজ অনেকটা কমিয়ে আনা গেলেও, তার বিপরীত হলে সমস্যার শেষ হবেনা। আর তাই হিজাবেও চুল সুন্দর,ঘন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে খুব সহজ কিছু উপায় নিয়মিত যত্ন করুন। সুস্থ থাকুক আপনার সুন্দর চুল।