Discover Natural Beauty Tips
শীতে যত্নে থাকুক আপনার চুল
শুরু হয়ে গেছে উৎসবমুখর শীতের আমেজ। পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে বিয়ে বা যে কোন আনন্দ অনুষ্ঠান এর আয়োজন। বলতে গেলে সারাবছরই যে ব্যস্ততা থাকে তা ঠিক এই সময়ে আরও বেড়ে যায়। এই ব্যস্ততার মাঝেও নিজের প্রতি কম বেশী সবাই যত্নশীল। ত্বকের পর যে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য পায় তা হল আমাদের চুল।
ঘন ঝলমলে সুন্দর চুল শুধুমাত্র আপনার সৌন্দর্যকেই নয়, নিজের আত্নবিশাসকেও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু শীতের এই সময়ে ত্বকের অন্যন্য সমস্যার সাথে সাথে চুলের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা যায়। যেমন শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ধুলো-ময়লার পরিমাণ বেড়ে যায়। স্ক্যাল্প থেকে ন্যাচারাল অয়েল কমে যায় ফলে হয়ে রুক্ষ ও প্রাণহীন। খুশকি, চুলের আগা ফেটে যাওয়া কিংবা চুল পরে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চলুন দেখে নেয়া যাক বেসিক অ্যান্ড ইজি স্টেপস
- ভালো মতো চুল আচড়ানো
চুলে ধুলো, ময়লা, ঘাম, ডেড স্কিন সেল ও স্ক্যাল্পে তেল জমে এক ধরনের আস্তরণ তৈরি হয়, এটাকে বলা হয় বিল্ড আপ। তাই সময়ে ভালো মত চুল আঁচড়াতে হবে। মোটা দাঁত কিংবা সবচেয়ে ভালো হয় কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে। এতে স্ক্যাল্পে ব্লাড সার্কুলেশন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের গ্রোথ হয়। তবে স্ক্যাল্পে খুব বেশী প্রেশার দিয়ে চুল আঁচড়ানো যাবে না। এতে স্ক্যাল্পে হেয়ার রুট ট্রিগার হয়ে সিবাম প্রোডাকশন বেড়ে যায়। এতে চুলে আঠালো ভাব তৈরি হয়। তখন আরও বেশি ময়লা জমে। আর চুল আঁচড়ানোর সময় জট ছাড়াতে হলে সব সময় চুলের আগা থেকে আঁচড়ানো শুরু করতে হবে। চুল ওপর থেকে জট ছাড়াতে গেলে অনেক চুল ছিড়ে আসে। তাই প্রতিদিন চুলে চিরুনি করুন। ভেজা চুলে খুব বেশী চুল আঁচড়ানো এড়িয়ে চলুন।
- নিয়ম করে চুলে তেল দেয়া
আমাদের মা-দাদীরা ছোট বেলায় চুলে সব সময় তেল লাগিয়ে দিতেন। চুলে ডিপ ময়েশ্চারাইজেশনের জন্য তেল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শীতের সময় আমাদের স্ক্যাল্পে খুশকির মত চামড়া উঠতে থাকে, এই অবস্থাকে বলা হয় ফ্ল্যাকি স্ক্যাল্প । শীতে বাতাসে শুষ্কতা চুলের ন্যাচারাল অয়েল টেনে নেয়। এতে স্ক্যাল্প অনেক বেশী ড্রাই হয়ে যায়। তাই নিয়ম করে চুলে ম্যসাজ করে তেল দিতে হবে। এই সময় চুলে হালকা গরম করে তেল দিয়ে ম্যাসাজ করলে এই ফ্ল্যাকি স্ক্যাল্প এবং চুল পড়ার সমস্যা কমে আসে। অনেকে তেল চুলে সারা রাত মেখে খে দেন । এটি করলে চুলের গোড়া আরও নরম হয়ে যায় এবং চুল ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আবার যাদের একনি বা ব্রণের সমস্যা আছে সেটাও বৃদ্ধি পায়। তাই চুলে তেল দেয়ার পর ১৫-৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। চুলের রুক্ষতা দূর করার জন্য গোসলের পর হেয়ার সিরাম ব্যবহার করা যায়।
- চুলে গরম পানি না দেয়া
ঠান্ডার সময় অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া উচিৎ নয় এতে চুলের গোড়া নরম হয়ে রুক্ষ হয়ে যায় এবং চুল ভেঙ্গে পরে। সব সময় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে চুল ধুতে হবে।
- চুলে ফেটে যাওয়া আগা কেটে ফেলুন
শীতকালে চুলের আগা ফেটে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এভাবে রেখে দিলে চুল পড়ে যেতে থাকে। তাই চুলের আগা ফেটে গেলে নিচ দিয়ে কিছুটা কেটে ফেলুন । এতে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
- খুব টাইট করে চুল বাধা কিংবা অতিরিক্ত হিট স্টাইলিং এক্সেসরিজ ব্যবহার এড়িয়ে চলা
চুল খুব বেশী টেনে বাঁধবেন না। টেনে বাঁধার কারণে চুলের ফলিকলে ক্ষতি হয়। এতে চুল গোড়া থেকে উঠে আসতে পারে। ফলে চুল পড়া বাড়ে। চুলে সরাসরি কোন হিট স্টাইলিং টুল যেমন স্ট্রেইটনার,হেয়ার ড্রায়ার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা। তবে যদি ব্যবহার করতে চান তাহলে এর আগে যে কোন হিট প্রোটেকটেন্ট স্প্রে, সিরাম বা জেল ব্যবহার করতে হবে।
- ঘরোয়া হেয়ার মাস্ক:
শীতকালে চুলের যত্ন নিতে নিয়মিত হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। এই মাস্কগুলি আপনার চুলকে ময়শ্চারাইজ করে, কোমল করে এবং চুল পড়া রোধ করে। জানুন কীভাবে ঘরে বসে এই মাস্কগুলি তৈরি করবেন।
১. অ্যাভোকাডো ও মধুর হেয়ার মাস্ক:
১টি পাকা অ্যাভোকাডো ভালো করে ম্যাশ করে নিন। এতে ১ টেবিল মধু ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি চুলে এবং মাথার তালুতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যাভোকাডো চুলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেল জোগায়। দই চুলকে ময়শ্চারাইজ করে। এই দুটি উপাদান মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে চুলে লাগিয়ে রাখলে চুল মসৃণ এবং কোমল হবে।
২. কলা, দুধ ও মধুর হেয়ার মাস্ক:
১টি পাকা কলা, ১/২ কাপ দুধ ও ১ টেবিল মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি চুলে এবং মাথার তালুতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নারকেল তেল চুলে প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা জোগায়। মধু চুলকে করে নারিশড।
৩. ডিম ও মধুর হেয়ার মাস্ক:
২টি ডিমের কুসুম, ১ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলে এবং মাথার তালুতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে যা চুলকে মজবুত করে।
৪. নারকেল তেল ও মধুর হেয়ার মাস্ক:
২ টেবিল চামচ নারকেল তেল ও ১ টেবিল মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলে এবং মাথার তালুতে ভালো করে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু চুলে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ঝলমলে ও প্রাণবন্ত চুলের জন্য সঠিকভাবে সময় নিয়ে চুলের যত্ন নেয়া জরুরী। আশা করি এই ইজি স্টেপ গুলো ফলো করলে অনেকাংশেই চুলের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তারপরও যদি অনেক বেশী সমস্যা দেখা যায় তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যত্নে থাকুক আপনার চুল।