BANGLA

শীতের আগমন:ত্বকের বাড়তি যত্ন

আবহাওয়ার পালাবাদলরের সাথে শীতের স্নিগ্ধতা এখন ছুঁই ছুঁই। এই শীতে অন্যান্য সময়ের তুলনায় স্কিন একটু বেশী মলিন বা ডাল হয়ে যায়। কেন? কারণ এই সময়ে বাতাসে থাকা আর্দ্রতা বা Humidity অনেকাংশে কমে যাওয়ার কারণে সব ধরনের স্কিন একটু বেশী ড্রাই হয়ে যায়। আর যারা একেবারেই স্কিন কেয়ার করেন না, তারাও ঠিক এই সময়ে নিজেদের স্কিন নিয়ে বেশ কন্সার্নড থাকেন। ত্বকের এই পরিবর্তন মূলত কোন সমস্যা নয় ,এটি আবহাওয়ার সাথে ত্বকের খাপ খাওয়ানো বা অ্যাডজাস্টমেন্ট প্রসেস কে বোঝায়। তাই এই সময়ে ত্বকের যত্নে বিশেষ কিছু দিক লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

 

শীতে ত্বকের যত্ন

  • ত্বক ভালো মত ময়েশ্চারাইজ করা

এই সময়ে পেট্রোলিয়াম কিংবা ক্রিম বেজড ময়েশ্চারাইজার সাধারণ লোশনের চেয়ে লং টাইম স্কিন হাইড্রেশনের জন্য ব্যবহার করা ভালো। যে কোন ধরনের স্কিনই অনেক কারণে সেনসিটিভ হতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি স্কিন অনেক বেশী সেনসিটিভ হয় তাহলে ফ্রেগ্রেন্স ও ল্যানলিন এর মত উপাদান নেই এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিৎ। বাচ্চাদের স্কিনে এই সময় বেবি অয়েল কিংবা লোশন ব্যবহার করতে হয়। কারণ বড়দের জন্য তৈরি লোশন শিশুদের কোমল ত্বকে রুক্ষ হতে পারে। আবার চ্যাপড লিপ্স বা ঠোঁট ফেটে যাওয়ার মত সমস্যা তো আছেই। তাই সাথে অবশ্যই পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে।

  • স্কিন ওভার ক্লিজিং না করা

স্কিনের ন্যাচারাল অয়েল বা সিবাম প্রোডাকশন ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ক্লিঞ্জার ব্যবহার করলে স্কিনের এই ন্যাচরাল অয়েল একদম ধুয়ে যায় । এতে ত্বকের পিএইচ লেভেল ইমব্যালেন্সড হয় এবং আর্দ্রতা হারায়। তাই এই সময়ে ভালো পিএইচ ব্যালেন্সড যুক্ত মাইল্ড ফেসওয়াশ বা ক্লিঞ্জার ব্যবহার করতে হবে।

  • গোসল

ঠান্ডার জন্য আমরা অনেকেই গোসলের সময় বেশি উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল করি। এটা আসলে স্কিনের জন্য ক্ষতিকর। এতে স্কিন আরও বেশী ড্রাই হয়ে ডেড স্কিন সেল শেডিং শুরু হয়। গোসল সব সময় হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে করাই ভালো। গোসলের সময় সাবান কম ক্ষারযুক্ত –যেমন – নন-ইরিটেটিং ও নন-ডিটারজেন্ট বেজড ব্যবহার করা উচিৎ। সেক্ষেত্রে স্ক্রিম ফর্মুলেশন যুক্ত সাবান কিংবা শাওয়ার জেল ব্যবহার করা যায়। গোসলের পর অবশ্যই ডিপ হাইড্রেশন যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

  • সানস্ক্রিন

অনেকের ধারণা শীতকালে যেহেতু সূর্যের প্রখরতা কম থাকে তাই সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আসলেই কি তাই? গরমের তুলনায় শীতকালে ইউভি ইন্ডেক্স এ ইউভি রে বা অতিবেগুনী রশ্নি -এর তীব্রতা কম থাকলেও তখনো তা ত্বকে প্রবেশ করে স্কিনের এপিডার্মাল সারফেস কে নষ্ট করে ফেলে। এতে স্কিনের ব্রাইটনেস কমে যাওয়া,একনি কিংবা ভিজিবল সাইন্স অফ এজিং এর মত সমস্যা দেখা যায়। তাই শীতকালেও দিনের বেলা বাহিরে যাওয়ার অন্তত ১৫-২০ মিনিট আগে অবশ্যই ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

  • পোশাক

শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে আমরা গরম কাপড় ব্যবহার করি। কিন্তু এই সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় শরীরের এক্সপোজড এরিয়া যেমন: হাত, পা এবং ঠোঁট সরাসরি বাতাসের সংস্পর্শে আসলে শুষ্ক হয়ে ওঠে। এই সময় ঘরে কিংবা বাহিরে সিনথেটিক বা খসখসে কাপড়ের বদলে নরম সুতি ও ভালো মানের উলের কাপড় পড়লে ভালো।

  • হিউমিডিফায়ারের ব্যবহার

শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের ময়েশ্চার টেনে নেয়। তাই আজকাল অনেকেই ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করে থাকেন। হিউমিডিফায়ার একটি মেশিন যেখানে পানি দিয়ে ছোট ছোট জলীয় কণা ঘরে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়। বাতাসে জলীয় কণা বা হিউমিডিটির পরিমাণ বাড়লে স্কিনের ড্রাইনেস কমে আসে।

  • হেলদি ডায়েট ও প্রচুর পরিমাণে পান পান করা:

এই সময় বাতাসে শুষ্কতা থাকার কারণে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায় তাই শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এতে স্কিন অনেক বেশী টান টান অনুভূত হয় এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃ সবুজ শাকসবজি,বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন। এটি স্কিনকে ফ্রি র‍্যাডিকেল ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকে বয়সের ছাপ যেমন রিঙ্কেলস ও ফাইন লাইন্স কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। ত্বক হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।

  • ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার

স্কিন হেলদি রাখতে কিছু ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।

১. ময়েশ্চারাইজিং মধু ও দইয়ের ফেস প্যাক
১ টেবিল চামচ মধু এবং ২ টেবিল চামচ দই মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখ এবং গলায় সমানভাবে লাগান। ১৫-২০ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

২. স্কিন ব্রাইটেনিং হলুদ ও দুধের ফেস প্যাক
১ চা চামচ হলুদ গুঁড়া এবং ২ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে মুখ এবং গলায় সমানভাবে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে দিন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. পোর মিনিমাইজিং মুলতানি ফেস প্যাক
২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি (ফুলারস আর্থ) এবং গোলাপজল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এটি মুখ এবং গলায় সমানভাবে লাগান। সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

শুধুমাত্র একটি সময় না সারাবছরই ত্বকের যত্নের প্রয়োজন। আমাদের চলতি জীবনে ত্বকের সঠিক যত্ন নেয়া টা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু শরীরের এই ভাইটাল পার্ট টি আমাদের পরিবেশগত নানা সমস্যা থেকেও রক্ষা করে। তাই তার বাড়তি যত্ন সবসময় প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *